চিকিৎসা বিজ্ঞানকে ভুল প্রমাণ করে ইভান্স মনসিগনাক ধ্বংসস্তুপের নিচে ২৭ দিন বেঁচে থাকার অলৌকিক, অবিশ্বাস্য ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন ২০১০ সালে হাইতিতে । এর আগে পাকিস্তানে ভূমিকম্পে রান্নাঘরে আটকা পড়ে পঁচা খাবার ও পানি পান করে ৬৩ দিন পর উদ্ধার পেয়েছিলেন নাকশা বিবি, ২০০৫ সালে ।
দক্ষিণ কোরিয়ার পার্ক হাইউন আটকা পড়েছিলেন ভবনের ধ্বংসস্তুপে। এভাবে ১৬ দিন পর উদ্ধার পান তিনি। বৃষ্টির পানিই ছিল পার্কের ভরসা। আর ১৯৯০ সালে ফিলিপাইনের ভূমিকম্পে হোটেলের ধ্বংসাবশেষে আটকে পড়া পেডরিটো ডে উদ্ধার পেয়েছিলেন ১৪ দিন পর। বাধ্য হয়ে নিজের মূত্র পান করতে হয়েছিল তাকে। অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যাওয়া এই লৌকিক জগতের অলৌকিক মানুষগুলোর কাতারে এবার নাম উঠল বাংলাদেশের রেশমার। ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে ৪০৮ ঘণ্টা পর ( ১৭ তম দিন) রেশমা বেগম জীবিত উদ্ধার পেলেন ।

এ অবিশ্বাস্য ঘটনা বাংলাদেশে ঘটল শুক্রবার ৩ টা ২০ মিনিটে। অলৌকিক এ ঘটনা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। রেশমার বেঁচে থাকা ও উদ্ধারের খবর বিবিসি, রয়টার্স, ভয়েস অব আমেরিকা, আল জাজিরা, জি নিউজ, এএফপিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম বেশ গুরুত্ব সহকারে প্রচার করেছে ।
ধসে পড়া ভবনের দুই নম্বর ফ্লোরের মার্কেটে অবস্থান করছিলেন রেশমা। ভবন ধসের সময় তিনি তার কর্মস্থল চতুর্থ তলা থেকে দুই নম্বর ফ্লোরে নেমে আসতে পেরেছিলেন। ১৭ দিনের অনিদ্রা, অনাহার ও দুর্গন্ধের কারণে এক সময় তিনি বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন ।
ইভানস উদ্ধার হন ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি। উদ্ধারের বহু বছর পেরিয়ে গেলেও নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হয় তার। ইভানসের আগে পাকিস্তানে এক ভূমিকম্পের ঘটনায় প্রায় ২ মাস পর নাকাশা বিবি নামে এক নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তবে এই নারী আটকা পড়েছিলেন তার রান্না ঘরে। এ সময় তিনি পচা ও বাসী খাবার খেয়ে বেঁচে ছিলেন ।
ইভানসের বেঁচে থাকার ঘটনা নতুন করে মনে পড়েছে অনেকেরেই মনে পড়েছে রেশমার উদ্ধারের ঘটনা থেকে। হাইতিতে তীব্র মাত্রার ভূমিকম্প হয় ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি । মাটির সাথে মিশে যায় দেশটির রাজধানি পোর্ট অব প্রিন্স। ছোট্ট এ শহরটির দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ।
ভূমিকম্পের এক সপ্তাহ পরেই জীবিত কাউকে উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়ে উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু করেন। ২৭ দিনের মাথায় ৮ ফেব্রুয়ারি ইভানসকে জীবিত উদ্ধার করা হয় ইভানসকে ।
দ্যা টেলিগ্রাফের রিপোর্ট অনুসারে, সুপারস্টোর বিক্রয়কর্মী ইভানস উদ্ধারের ১০ সপ্তাহ পর প্রথম সাক্ষাৎকারে বলেছেন উদ্ধারের আগে পর্যন্ত তিনি কিছু খেয়েছিলেন বা পান করেছিলেন কি- না তা মনে করতে পারেননি ।
বিস্ময়ভরা কণ্ঠে তিনি তিনি টেলিগ্রাফকে বলেছেন, “ কীভাবে বেঁচে ছিলাম মনে নেই। মনে করতেও চাই না। আমার কাছে এটাই বড় যে, এখন আমি বেঁচে আছি।”
রানা প্লাজায় জীবিত উদ্ধার হওয়া প্রাণের মধ্যে রেশমা হচ্ছেন ২৪৩৮ তম মানুষ। ৭০০ জনের লাশের পর তাকে জীবিত উদ্ধার করা হল। এর আগে ২৮ এপ্রিল সাদেক নামে একজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয় ।