সামুদ্রিক ঘোড়া বা সি হর্স বিশ্বের প্রাণীকুলের একমাত্র প্রাণী যাদের পুরুষরাই গর্ভধারণ করে থাকে এবং বাচ্চা প্রসব করে। আর নারীরা সেবায় নিয়োজিত থাকে। যা প্রাণীকুলের অন্য প্রানীদের বিপরীত এই প্রাণীর।

অনেক সময় পাখির হলে ডিমে তা দেয় পুরুষ পাখি; আবার দেখা যায় মুখে নিয়ে পুরুষ মাছেরা ডিমগুলো ফোটার আগ পর্যন্ত সংরক্ষণ করে। গর্ভধারণ শুধু নারীর ক্ষমতার মধ্যেই পড়ে, সচরাচর আমরা এমনটাই জানি। অবাক হওয়ার মতো তথ্য হলো, প্রাণীজগতে এমন এক মাছের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যাদের পুরুষরা গর্ভধারণ করে থাকে। প্রাণীটির নাম সি হর্স বা হিপোক্যাম্পাস বা সামুদ্রিক ঘোড়া।
কিডনি পরিষ্কার রাখে এমন ৯টি খাবার
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের অগভীর সমুদ্রে এই মাছটিকে দেখতে পাওয়া যায়। এই মাছতির মুখ আর গলা দেখতে ঘোড়ার মতো তাই এদেরকে সামুদ্রিক ঘোড়া বা সি হর্স। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ভঙ্গিমা, আঁকড়ে ধরার ক্ষমতাযুক্ত বাঁকানো লেজ রয়েছে। সি হর্স বা সামুদ্রিক ঘোড়া একটি সামুদ্রিক মাছ!
এই মাছটি একটিনোপটেরিগি পরিবারভুক্ত একটি মেরুদণ্ডী প্রাণী। এই প্রাণীটিকে মাছ বলার প্রাধান কারণ হলো, এরা মাছের মতোই কানকোর মাধ্যমে শ্বাসকার্য চালায়। মাছের সঙ্গে যদিও এদের তেমন কোনো মিল নেই। এদের সামনে এবং পিছনে মোট চারটি পাখনা আছে, লম্বা লেজের পিছন দিকে একটি, পেটের ঠিক নীচে একটি, অন্য দুইটি চোয়ালের দুই পাশে।
এই মাছটি প্রতি সেকেন্ডে ৫০ বার পাখনাগুলো নাড়তে পারে। পাখনা থাকলেও সি হর্স অন্যান্য মাছের মতো গঠনগত কারণে দ্রুত চলাচল করতে সক্ষম নয়। পৃথিবীতে প্রায় ৪৭ প্রজাতির সি হর্সের সন্ধান মিলেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশে সি হর্সরা সাধারণত এক থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
পৃথিবীর সবচেয়ে ১২টি ভৌতিক ভয়ানক স্থানের নাম
এবার আসা যাক মুল আলোচনা সি হর্স পুরুষরা কীভাবে গর্ভধারণ করেঃ-
এই প্রানীটি গিরগিটির মতো রং পাল্টাতে পারে। যা আত্মরক্ষার সময় বা সঙ্গিনীকে আকৃষ্ট করতে সাহায্য করে। তাদের রং দেখেই স্ত্রী সি হর্স’রা কাছে এগিয়ে আসে।
সারা প্রজনন ঋতু পুরুষ সি হর্স কাটায় এক প্রেমিকাকে নিয়েই। এই প্রাণীটি প্রজনন ঋতুতে অনেক বেশি বাচ্চা জন্ম দিতে পারে। প্রত্যেকদিন নিয়ম করে একটি নির্দিষ্ট সময় স্ত্রী সি হর্স-এর সঙ্গে পুরুষরা সময় কাটায় থাকে। অর্থাৎ মিলনের আগে তারা জমিয়ে প্রেম করে নেয়।
এ বিষয়ে বিজ্ঞানীদের মত, মিলনের আগে তাদের মধ্যকার এই প্রেমের কারণে পুরুষ ও স্ত্রী সি হর্স-এর শুক্রাণু ও ডিম্বাণু অতি সুপুষ্ট হয়, এবং এই সময় তাদের দেহের রঙ ঘন ঘন পরিবর্তিত হতে থাকে। একে অপরের লেজ আঁকড়ে জলে পাশাপাশি সাঁতার কাটতে থাকে। এই সময় পুরুষ সি হর্স তার পেটের থাকা থলি ব্রুড পাউচটির ভেতরে পানি ঢুকিয়ে নিয়ে থলিটি পরিষ্কার করে নেয়। এভাবেই গর্ভধারণের জন্য পুরুষ সি হর্স প্রস্তুতি নিয়ে থাকে।
ছবি নয় বাস্তব! পোষ্য কুকুরকে ভালবেসে সম্পত্তি লিখে দিলেন
অতঃপর মিলনের সময় স্ত্রী মাছটি তার ওভিপজিটর নালির সাহায্যে পুরুষের ব্রুড পাউচ নামক থলির মধ্যে ডিম্বাণু ঢেলে দেয়। এপ্রক্রিয়ায় সময় লাগে মাত্র ছয় সেকেন্ড। পুরুষটি এরপর সেই থলের ভেতর শুক্রাণু ছেড়ে দেয়। শুক্রাণুর সঙ্গে ডিম্বাণুর মিলনে তৈরি হয় ভ্রূণ। এবার স্ত্রী সি হর্সের শরীর পাতলা হয়, আর অন্যদিকে পুরুষ সি হর্সের পেট ফুলতে থাকে। এখন থেকেই স্ত্রী মাছটি পুরুষ সঙ্গীকে সর্বদা সঙ্গ দিতে থাকে। অপেক্ষায় থাকে কখন তার পুরুষ সঙ্গী সন্তান প্রসব করবে। প্রজাতি ভেদে নয় থেকে ৪৫ দিন গর্ভধারণ করে পুরুষ সি হর্স’রা। পুরুষটি গর্ভধারণকালে ৩৩ শতাংশ বেশি অক্সিজেন নেয় সঙ্গে বেশি খাবারও খায়। এদিকে স্ত্রী সি হর্স খাবার খুঁজে নিয়ে এসে পুরুষটিকে খেতে দেয়। ডিমগুলো থলিতে নিয়ে পুরুষ সি হর্স খুব সাবধানে চলাফেরা করে। ব্রুড পাউচে থাকা শিশু সি হর্সগুলো প্রসবের উপযোগী হয়ে গেলে, পুরুষ সি হর্স সন্তান প্রসব করে।
প্রজাতি ভেদে ১০০ থেকে এক হাজারটি পর্যন্ত সন্তান প্রসব করে পুরুষ সি হর্স’রা। সন্তানদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুরুষ সি হর্স প্রসব করে রাতের অন্ধকারে। তবুও প্রসব করা শিশু সি হর্সগুলোর মধ্যে মাত্র দশমিক পাঁচ শতাংশ বাচ্চা পূর্ণবয়স্ক হতে পারে। প্রাণীকূলের বিরল এক প্রজাতির মাছ হল সি হর্স। প্রানীজগতে তাদের জীবন ধারণ ব্যবস্থা সত্যিই অবাক করার মতো।