আল্লাহ্ তা’আলা পরম দয়ালু এবং অসীম মেহেরবান। তিনি উদার ক্ষমাশীল। ক্ষমা করার জন্য ক্ষমা প্রার্থীর আবেদনের অপেক্ষায় থাকেন তিনি। তাই তিনি বলে দিয়েছেন অসংখ্য পথ ও পাথেয়। মহাক্ষমার ঘোষণা করেছেন তিনি কুরআন ও হাদীসের স্থানে স্থানে। স্বীয় বান্দাদেরকে প্রদান করেছেন তিনি ক্ষমার সুবর্ণ সুযোগ আর বিশাল অফার। বরাদ্দ করেছেন ক্ষমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সময়। সে সময়ে তিনি মহাপাপীদের মুক্তি দেন, এবং স্তর তরান্বিত করেন। মর্যাদা বাড়িয়ে দেন, বাড়িয়ে দেন ভালো কাজের বিনিময় অনেক অনেক গুণে। মুছে দেন পাপীদের কালিমার সব চিহ্ন। এই মহাঅফার সমূহের একটি হলো শবে বরাত।
শবে বরাতের পরিচিতিঃ
আরবি বছরের অষ্টম মাস হল শাবান মাস। এই শাবানের ১৪ তারিখ দিবগত রাতকে ফার্সি ভাষায় শবে বরাত বলে। ‘শব’ অর্থ রাত আর ‘বরাত’ অর্থ মুক্তি। এককথায় শবে বরাত মানে মুক্তির রজনী। এই রাতে পরম করুণাময় মুক্তি ও মাগফিরাতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। তাই এর নাম মুক্তির রজনী বা শবে বরাত। বিজ্ঞজনদের গবেষণা মতে কোরআনে কারীমে এই রাতকে ভাগ্য রজনী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআনের ভাষায় মহান আল্লাহ প্রতিবছর এই রাতে সৃষ্টি জগতের ভাগ্য বন্টন করেন। তাই এর নাম ভাগ্য রজনী বলা হয়েছে। এই রাতটি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত তথা মধ্য শাবানের রাত। তাই হাদীসে এই রাতকে মধ্য শাবানের রজনী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
শবে বরাতের ফজিলত ও করণীয়ঃ
মহিমান্বিত শবে রাতের একাধিক ফযীলত ও বিভিন্ন করণীয় পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে। আছে মুসলিম মনীষীদের উদ্ধৃতি ও আমলের অসীম গুরুত্ব।
হাদীসের আলোকে শবে বরাতঃ
শবে বরাতে মুক্তি ও রহমতের দ্বার উন্মুক্তঃ শবে বরাত একটি মহিমান্বিত রজনী। এই রাজনীতে পরম করুণাময় তাঁর রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করেছেন। পাপীদেরকে উদার চিত্তে ক্ষমা করেন।
হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহ্ তা’য়ালা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টি কুলের প্রতি (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসুক-বিদ্বেষী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।
(সহীহ ইবনে হিব্বান, ১২/৪৮১, হাদীস নং ৫৬৬৫)
শবে বরাত ভাগ্য বন্টনের রাতঃ
শবে বরাতের অন্যতম ফজিলত হলো এই রাতে সৃষ্টি জগতের ভাগ্য বন্টন করা হয়। সুরায়ে দুখানের শুরুতে আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেন- নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি মুবারক রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এই রাতে হেকমতপূর্ণ সব বিষয় সিন্ধান্ত করা হয়। (দুখান ২-৩)
এই রাতে হেকমতপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ের ভাগ করা বা নির্ধারণ করা হয়। তাই এই রাতকে ভাগ্য রজনী বা মুবারক রাত বলা হয়। কুরআনে কারীমের উপরোক্ত আয়াতের আলোকে যে রাতে ভাগ্য বন্টন করা হয় ওই রাতের নাম হল মুবারক রাত। মুবারক রাত কোন রাতকে বলা হবে? কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, মুবারক রাত হল শবে কদর। কেননা আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারীমের উপরোক্ত আয়াতে উল্লেখ্য করেছেন মুবারক রাতে কুরআন নাযিল করেছেন। তাই ওই রাতই মুবারক রাত হিসেবে গণ্য হবে।যে রাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে। আরসুরায়ে কদরে আল্লাহ তায়ালা উল্লেখ, করেন নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি শবে কদরে।
(সুরা কদরআয়াত-১)